ছোট পর্দায় দেবী কালী বা মহিষাসুরমর্দিনীর মতো আধ্যাত্মিক চরিত্রে বহুবার দেখা গেছে অভিনেত্রী ‘পায়েল দে’কে (Payel De)। ঐশ্বরিক চরিত্রে দেখতে দেখতে অনেকেই তাঁকে একধরনের আধ্যাত্মিক রূপেই ভাবতে শুরু করেছেন। কিন্তু বাস্তব জীবনে তাঁর ভাবনা খানিকটা আলাদা। দেবীর চরিত্রে অভিনয় করলেও পায়েল মনে করেন, বাস্তব জীবন আর পর্দার জীবন এক নয়। আর সেটা তিনি নিজেও স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন।
অনেকেই ভাবেন, এমন পবিত্র চরিত্রে অভিনয় করতে গেলে একজন শিল্পীর উচিত নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মানা যেমন নিরামিষ আহার গ্রহণ, কিছুদিন উপবাস রাখা বা নিজেকে মানসিকভাবে শুদ্ধ রাখা। কিন্তু পায়েল নিজের এই বিশ্বাস বা সামাজিক চাপের মধ্যে একটুও গা ভাসান না। বরং তিনি অকপটভাবে বলেছেন, তিনি কখনওই নিরামিষ আহারী নন, বরং প্রচণ্ড রকম আমিষপ্রেমী! তাঁর মতে, পর্দার চরিত্র অনুযায়ী জীবনযাত্রা বদলানো একজন অভিনেতার জন্য জরুরি নয়।
এই বক্তব্য অবশ্য সবার পছন্দ নাও হতে পারে। কেউ কেউ মনে করেন, ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক চরিত্রে অভিনয় করলে কিছু পার্সোনাল প্র্যাকটিসের মধ্য দিয়ে যাওয়া উচিত। বিশেষত, যখন সেই চরিত্র দেশের কোটি কোটি মানুষের শ্রদ্ধার জায়গা। কিন্তু পায়েলের যুক্তি ভিন্ন। তিনি বিশ্বাস করেন, অভিনয় একটি পেশা, আর সেই পেশার মধ্যে থেকেই তিনি নিজেকে যথাসম্ভব নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরেন। চরিত্রের গভীরতা বুঝতে পড়াশোনা করেন, রিহার্সাল করেন, কিন্তু খাবার-দাবার বা জীবনধারায় ধর্মীয় চর্চা জুড়ে দেওয়া তাঁর মতে অপ্রয়োজনীয়।
এদিকে দেবীর ভূমিকায় অভিনয় করলেও বাস্তবে কখনও অতিপ্রাকৃত কিছু অনুভব করেননি। তবে মা হওয়ার পর তার অভিজ্ঞতা একদমই অন্যরকম। তিনি বলেন, মা হওয়ার আগে ‘মাদারলি ইনস্টিংক্ট’ কথাটা শুনলেও সেটা ঠিক কতটা গভীর, সেটা টের পাননি। কিন্তু মেরাকের জন্মের পর সেই অনুভবটা যেন স্বাভাবিকভাবেই চলে এসেছে। এখন তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, মেরাকের কিছু হলে যেন মনের ভেতর কোথাও একটা ইশারা পান। একটা অদৃশ্য টান সব সময় কাজ করে।
আরও পড়ুনঃ “মমতা শঙ্করের শিষ্যত্বই আমাকে আজকের লকেট বানিয়েছে!” অভিনয় জীবনে আবারও ফিরতে চান অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়! বিপক্ষ দলের হওয়ায় তবে কি টলি পাড়ায় মিলছে না সুযোগ?
গর্ভাবস্থা থেকে এটাকেই তিনি দেবী চরিত্রে অভিনয় করার ফলে পাওয়া অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা হিসেবে দেখেন। তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গি নিঃসন্দেহে প্রশ্ন তুলেছে, একইসঙ্গে একটা বড় অংশের মানুষের প্রশংসাও পেয়েছে। কারণ, এখানে একদিকে রয়েছে একজন শিল্পীর স্বাধীনতা ও বাস্তববোধ, আর অন্যদিকে সমাজের কিছু প্রচলিত প্রত্যাশা। শেষে পায়েলের মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, পর্দার রূপ বাস্তবের প্রতিচ্ছবি নয়। দর্শকের আবেগ ও শিল্পীর বাস্তবতার মধ্যে যে ব্যবধান থাকে, তা পূরণ করার দায় অভিনেতার নয় বরং তা বোঝার দায় দর্শকেরও বটে।