‘এক নারী হিসেবে আমার সমবেদনা জানানো কি অন্যায়? অন্যরাও তো ছিল, আমার সঙ্গেই কেন?’ প্রশ্ন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর!

তিলোত্তমার ন্যায় বিচারের দাবিতে রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন সকলে। অন্যান্য দিনের মতো গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর বুধবার শ্যামবাজারে একটি জমায়েত হয়, আর জি করের কাণ্ডের (R g kar medical medical College and Hospital)জন্য। কিন্তু শ্যাম বাজারের এই জমায়েতে হাজির হয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন টলিউডের (tollywood) জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত(Rituparna Sengupta)।

তারকা নয় একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে এই মিছিলে সাক্ষী হয়ে থাকতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু সেখানে তাকে জনরোষের মুখোমুখি হতে হয়,এমনকি তার উদ্দেশ্যে গো ব্যাক স্লোগান ও ওঠে। বিপুল সংখ্যক জনতা তাকে ধাক্কা দিতে থাকেন ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে, তার গাড়িটাও তুবড়ে দেওয়া হয়। এই উদ্দেশ্যে একটা সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত জানিয়েছেন তিনি এখন‌ও বুঝতে পারছেন না এমনটা কেন হল! কী কারণে হল?

অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের কথায়, “আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিহত চিকিৎসক-পড়ুয়ার জন্য সুবিচার চেয়ে ৪ সেপ্টেম্বর শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ের প্রতিবাদী জমায়েতে উপস্থিত হয়েছিলাম।ভেবেছিলাম, এত মানুষের প্রতিবাদ বৃথা যাবে না। আমিও সুবিচারের আশায় রয়েছি। জমায়েতে যোগ দিয়ে মোমবাতি জ্বালাই। কিন্তু, কিছু ক্ষণের মধ্যেই বদলে গেল ছবিটা। আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভের মুখে পড়লাম। আমার উদ্দেশে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে শুরু করেন অনেকে। চার পাশ থেকে উলুধ্বনি এবং শঙ্খ বাজিয়ে ব্যঙ্গ।”

এখানেই শেষ নয়, এরপর অভিনেত্রীর গাড়িকে উদ্দেশ্য করে জুতো ছোঁড়া হতে থাকে। অভিনেত্রী বলেন, সেই সময় জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেছিলেন, তারা যেন এমনটা না করেন, কারণ অভিনেত্রী এখানে সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলতে এসেছেন,সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসেছেন। কিন্তু অভিনেত্রীর কথা কেউ কানেই তোলেনি। অভিনেত্রীর ভাষায়,“ আসলে আমার মনে হয়, কিছু মানুষ প্রতিবাদের কথা মাথায় না রেখে, হুজুগে চলে গিয়েছিলেন জমায়েতে।”

অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা বলেন তিনি বুঝতে পেরেছেন সকলেই ক্ষুব্ধ আছেন, কিন্তু মহানগরী কলকাতার এই রূপ তিনি এর আগে কখন‌ও দেখেননি। তার মত একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে কেন এভাবে আক্রমণ করা হলো এই প্রশ্নও তিনি করেছেন। অভিনেত্রী বলেছেন, “বুঝতে পারছি, সকলেই ক্ষুব্ধ। তবে, কলকাতার প্রতিবাদী চেহারার মধ্যে এই চেহারাটা দেখে আমি লজ্জিত, আহত, কম্পিত। বুধবার রাতে আমার প্রাণটাও চলে যেতে পারত। আমি একজন অরাজনৈতিক, নিরপেক্ষ মানুষ হিসাবে, একজন মহিলা হিসাবে অন্য মহিলার পাশে দাঁড়াতে এসেছিলাম। কিন্তু বিরাট সংখ্যক মত্ত এই ঘটনা ঘটাল।”

অভিনেত্রী গতকাল তিলোত্তমার বাবা-মার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি তবে এই আক্রমণের কারণে তিনি থেমে যাবেন না এটাও স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন। ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, “আমি তো কাল কোনও তারকা হিসাবে নয়, মানুষ হিসাবে গিয়েছিলাম। যেখানে ঘটনাটা ঘটল, সেখানে নিহত চিকিৎসকের বাবা-মাও এসেছিলেন। ভেবেছিলাম, একবার দেখা করব ওঁদের সঙ্গে। বলতাম, ওঁদের লড়াইয়ের সঙ্গে আমিও রয়েছি। কিন্তু তা হল কই? তবে এই ঘটনার পর আমি থেমে যাব, এমন নয়। আমার মনের মধ্যে প্রতিবাদ থাকবে। আমিও একই ভাবে সুবিচার চাইব। সেটা থামবে না।

R g kar medical College and hospital

অভিনেত্রী বলেন যারা এই কাণ্ডগুলো করেছেন তারা হয়ত নিজেরাও জানেন না কী করেছেন, বাড়ি ফিরে তিনি যখন দেখেন তার গাড়িতে অসংখ্য হাতের ছাপ, হাত দিয়ে মেরে মেরে গাড়ি তুবড়ে দেওয়া হয়েছে,তাতে অভিনেত্রীর মনে এতটুকু‌ও আক্ষেপ কাজ করেনি, তিনি শুধু প্রশ্ন করেছেন, “ওই রাতে আমি একা তো নয়, সোহম-শোলাঙ্কিরাও ছিল। গান গাইছিল ওরা। আমি ওদের সঙ্গে মিশে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এমন কিছুর সাক্ষী হব, ভাবতে পারছি না এখনও।
বুঝতে পারলাম না কেন এই আক্রোশ। আমি তো রাজনৈতিক ব্যক্তি নই। আমি এই শহরের সকলের সঙ্গে রাত জাগতে গিয়েছিলাম। ওই ভিড়ের মাঝে ‘চটিচাটা’ বলে সম্বোধন করা হয়েছে আমাকে। এমন অসভ্যতা। আসলে যাঁরা এটা করলেন তাঁদের মুখ্য উদ্দেশ্য আন্দোলন করা নয়। একজন তারকাকে হেনস্থা করা। কাউকে পাচ্ছেন না, সামনে ঋতুপর্ণা ছিল ব্যস্, ঝাঁপিয়ে পড়লেন।”

আরও পড়ুন: বিয়ের দিন মালাকে ভালো মতো জব্দ করল কৌশিকী, জগদ্ধাত্রী! মালার অবস্থা দেখে হেসে উঠল মেহেন্দি!

অভিনেত্রী গতকালের বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশ্যে আর‌ও একটি প্রশ্ন করেছেন, তিনি বলেন অনেকের নিষেধ সত্বেও সাধারণ মানুষ হিসেবে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন কিন্তু তার জমায়েতে যাওয়া কি অন্যায়? ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর কথায়,“ আমাকে অনেকেই বলেছিলেন জমায়েতে শামিল না হতে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম মানুষ হিসাবে সঙ্গে থাকব। এমন নিকৃষ্ট ঘটনা ঘটল, এখনও ঘোর কাটছে না। আমি প্রশ্ন করতে চাই আমার সমবেদনা জানানো কি অন্যায়? একটি মেয়ের হয়ে তাঁরা আন্দোলন করছেন আর অন্য একজন নারীকেই হেনস্থার শিকার হতে হল! আসলে হয়তো এই মানসিকতা আমাদের বর্বরতার দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে।”