টলিউডে খুব কমই এমন ব্যক্তিত্ব আছে, যারা সবসময়ই নিজের স্পষ্টভাষী অবস্থানের জন্য পরিচিত। তাঁদের মধ্যে একজন অভিনেত্রী ‘সুদীপ্তা চক্রবর্তী’ (Sudipta Chakraborty)। তাঁর অভিনয়ের মতোই বাস্তব জীবনের চরিত্রও দৃঢ় ও নির্ভীক। সম্প্রতি পরিচালক প্রমিতা ভৌমিকের ছবি ‘অহনা’-য় নাম ভূমিকায় দেখা যাবে তাঁকে। ছবিতে তিনি এক লেখিকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। যার কলম তাঁকে দিয়েছে খ্যাতি, কিন্তু সেই সাফল্য সহ্য করতে পারে না তাঁর প্রফেসর স্বামী। দাম্পত্যে অস্বস্তি ও দূরত্ব তৈরি হয়, সন্তানহীনতার যন্ত্রণাও যুক্ত হয় সেই সম্পর্কে। সমাজের বহু নারীর মতো অহনার গল্পেও লুকিয়ে আছে এক অন্যরকম লড়াই।
যেটা অনেক দর্শকের কাছেই চেনা বলে আশা করছেন নির্মাতারা। তবে কেবল অভিনয়জগতেই নয়, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতেও আলোচনায় উঠে এসেছেন সুদীপ্তা। আরজিকর হাসপাতালের ভয়ঙ্কর ঘটনার সময় তাঁকে বারবার রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করতে দেখা গিয়েছিল। দিনের পর দিন নির্ভীকভাবে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন ন্যায়বিচারের দাবিতে। কিছুদিন আগেই তিনি ছবির প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, কোনও প্রাপ্তির আশায় আন্দোলন করেননি, বরং মনের ভেতরের ডাকেই পথে নেমেছিলেন। কিন্তু এর ফল তাঁকে ভুগতে হয়েছে।
গত এক বছরে তাঁর কোনও নাটক সরকারি হলে মঞ্চ পায়নি, কোনও ছবিও সরকারি হলে মুক্তি পায়নি। তিনি আরও বলেছিলেন, এই সমস্যা শুধু তাঁর একার নয়। ইন্ডাস্ট্রির অনেককেই আন্দোলনের পর থেকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। তবু সুদীপ্তা নিজের অবস্থান থেকে সরে আসতে রাজি নন। তাঁর দাবি, তিনি নারী বা পুরুষ— এই বিভাজনে বিশ্বাসী নন, বরং মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত হোক, সেটাই চান। তাই তিনি নিজেকে নারীবাদী নয়, বরং মানুষবাদী বলতেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
সম্প্রতি এই একই বিষয় নিয়ে সমাজ মাধ্যমেও একটি লেখা পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে তিনি লিখেছেন, “আমার অভিনীত বাংলা নাটক গত এক বছরে পশ্চিমবঙ্গের কোনো সরকারী হলে ডেট পেল না। আমার অভিনীত কোনো বাংলা সিনেমা গত এক বছরে কোনো সরকারী হলে মুক্তি পেলনা। পুরোটাই কি কাকতালীয়??” কার্যত এই পোস্ট ঘিরেই শুরু হয়েছে আলোচনা। সমাজ মাধ্যমে অভিনেত্রীর সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন অনেকেই। কেউ লিখেছেন, “অসাধারণ শক্তিশালী অভিনেত্রী আপনি।
অমেরুদণ্ডী হতে পারেন নি, তাই এই পুরস্কার। দুঃখ পাবেন না।” আবার অন্যজনের কথায়, “কিছুতেই কাকতালীয় নয়, আপনি যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা মানুষ। প্রয়োজনে মাঠে বসে নাটক দেখব, সিনেমা দেখব। ষাট পেরোনো মানুষ আমি, আমাদের ছেলেবেলায় এমন মাঠে বসে নাটক, সিনেমা দেখার অভিজ্ঞতা আছে। আনন্দ তাতে কিছু কম পড়ে না, এমনই থাকুন।” অনেকেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, “চাটুকারিতা করলে খুব সহজেই সরকারি প্রেক্ষাগৃহ বা হল পেয়ে যেতেন।
সেই “স্কিল” আপনার নেই বলেই আপনি ভুক্তভুগী। ছিঃছিঃ।এটা বাঙালী হিসেবে আমাদের লজ্জ্বা। তোমার মত অভিনেত্রীকে এইভাবে অসম্মান করা হচ্ছে।” এক কথায়, অভিনেত্রীর এই সোজাসাপ্টা মনোভাবই তাঁকে আলাদা করে চেনায়। অভিনয়ের পর্দায় অহনার মতো চরিত্র কিংবা বাস্তবে প্রতিবাদের ময়দান— দুই জায়গাতেই তিনি যেন একই রকম নির্ভীক। সুদীপ্তার আরও একবার প্রমাণ করে দিলেন যে শিল্পী শুধু চরিত্রেই প্রাণ দেন না, বরং সমাজের আয়নাও হয়ে ওঠেন।
আরও পড়ুনঃ‘এরকম অশিক্ষিত, মানসিক অসুস্থরা সব জায়গায়…’ – এবার ‘ধর্ষ’ণ’ প্রসঙ্গে প্রাক্তন স্ত্রীর মন্তব্য ঘিরে নীরবতা ভাঙলেন সব্যসাচী! ব্যর্থ স্বামী হিসেবে দুঃখিত বলেই কি এমন বি’স্ফো’রক স্বীকারোক্তি?
Disclaimer: এই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত মতামত, মন্তব্য বা বক্তব্যসমূহ সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত অভিব্যক্তি মাত্র। এটি আমাদের পোর্টালের মতামত বা অবস্থান নয়। কারও অনুভূতিতে আঘাত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এবং এতে প্রকাশিত মতামতের জন্য আমরা কোনো প্রকার দায়ভার গ্রহণ করি না।