‘কাশ্মীর'(Kashmir) — যাকে বলা হয় ভূখণ্ডে এক টুকরো স্বর্গ (Heaven on Earth), এক কথায় যাকে আমরা ভূস্বর্গ নামেও চিনি। গতকাল অর্থাৎ ২২শে এপ্রিল সেই ভূস্বর্গের উপত্যকাই ভিজলো নিরীহ হিন্দুদের (Hindu) র’ক্তে। কাশ্মীরের পহেলগাঁও (Pahalgam) যেন হিন্দুদের কাছে আজীবন দুঃস্বপ্নের মতন থেকে যাবে। কাল সন্ধ্যেতে এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ঘুম উড়েছে সকলের। আর যে ভূখণ্ডই একসময় শিকড় ছিল অভিনেতা ‘ভরত কল’ (Bharat Kaul) এর, আজ যেন তাঁর কণ্ঠে উঠে আসছে যন্ত্রণার প্রতিধ্বনি হয়ে। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির একমাত্র কাশ্মীরি পণ্ডিত (Kashmiri pandit) তিনি।
অভিনেতা হিসেবে তিনি কেবল অভিনয়ের মাধ্যমে নয়, নিজের অতীত আর জাতিসত্তার বেদনাও বারবার তুলে ধরেন তিনি। সম্প্রতি কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এই ঘটনায়, অভিনেতার অতীতের কষ্টই যেন আবার নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। ২২ এপ্রিল ঘটে যাওয়া এই বিভীষিকাময় ঘটনার পর থেকেই ঘুম উধাও ভরতের চোখ থেকেও। বহুদিন হয়েছে ভূস্বর্গ ছেড়ে পাকাপাকিভাবে সংসার পেতেছেন কলকাতার বুকেই। অভিনয়ের সূত্রে এখানে আসার পর থেকেই আর ফেরত যাওয়ার কথা মাথায় আসেনি তার।
তিনি শুধু একজন অভিনেতা হিসেবে নন, বরং একজন প্রাক্তন কাশ্মীরবাসীর চোখ দিয়ে অনুভব করছেন সেই অন্ধকার, যা একসময় তাঁর পরিবারের সামনে এসেও দাঁড়িয়েছিল। ২২শে এপ্রিল দিনটি ছিল ধরিত্রী দিবস, আর এদিনই কাশ্মীরের বুকে যে রক্তের স্রোত বয়ে গেল, তা দেখে অতীতের দুঃস্বপ্ন ফিরে আসে ভরত কলের। অভিনেতা বলেন, “২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণ এক নিমেষে কেড়ে নেওয়া হল, শুধু টার্গেট কিলিংকে সামনে রেখে! যদিও এই ঘটনা ভূস্বর্গে নতুন কিছু নয়।” অতীতের সেই ভয়াবহতার স্মৃতি হাতরে অভিনেতা বলেন, “ভিতরটা যেন ফেটে যায়, যখনই মনে করি।”
তাঁর কথায়, ১৯৮৯ সালের বিভীষিকাময় স্মৃতি যেন আবার ফিরে এল, যেখানে একসময়ে ঘরে ঢুকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের খুঁজে খুঁজে মারা হচ্ছিল। অভিনেতা বলেন, “সেই একই পদ্ধতি, সেই একই নির্মমতা! আর এবারও নাকি একজনকে বলা হয়েছিল প্যান্ট খুলতে, তারপরেই গুলি করা হয়! এ দৃশ্য কেবল ভয়াবহ নয়, অমানবিকতার সীমালঙ্ঘন।” তিনি মনে করেন, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এই ধরনের অপরাধ থামানো সম্ভব নয়। সৌদি আরবের মতো কড়া শাস্তি চান তিনি! যেখানে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে, চোখে চোখ রেখে, জনসমক্ষে বিচার করা হয়।
তাঁর মতে, “মানবাধিকারের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এখন হিন্দুদের নিরাপত্তা আর ন্যায় পাওয়া। একটি মেয়ে যে সদ্য বিবাহিত, তাঁর স্বামীকে চোখের সামনে গুলি করে হত্যা করা হল! তার জীবনের এই ক্ষত পূরণের দায় কার? সে এখন যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, সেটা ভেবেই শিউড়ে উঠছি বারবার।” তাঁর মতে, বিগত কয়েক বছরে কাশ্মীর কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল, বিশেষত পর্যটনের মাধ্যমে নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছিল উপত্যকা। কিন্তু এই হামলা সেই সব শান্তিকে আবারো কেড়ে নিল।
আরও পড়ুনঃ এক কামরার ঘর থেকে দোতলা বাড়ি! সংসার সামলাতে ছোটো থেকেই উপার্জন শুরু, করতে হয়েছে অনেক ত্যাগ!— ‘মিঠাই’ এর ‘নিপা’ ওরফে ঐন্দ্রিলা সাহার জীবনের গল্প শুনলে আবেগে ভাসবেন আপনিও!
তিনি কেবল একজন অভিনেতা হিসেবে নয়, একজন প্রাক্তন বাসিন্দা হিসেবে বুঝতে পারছেন, সেখানকার প্রতিটি পরিবারের ভিতর কী ভয় জমে বসে আছে। এই ঘটনায় বাংলার মাটিতে থেকেও কাশ্মীরের প্রতিটি কম্পন অনুভব করছেন ভরত কল। তাঁর চোখে উপত্যকা আজও অপার সৌন্দর্যের প্রতীক হলেও, সেই সৌন্দর্যের ভিতর লুকিয়ে আছে রক্তাক্ত অতীত আর একটি আতঙ্কিত বর্তমান। আর সেই অভিজ্ঞতার যন্ত্রণা নিয়েই অভিনেতা আজ এই মন্তব্য করলেন।