একটা সময়ে টলিউডকে একের পর এক সুপারহিট ছবি উপহার দিয়েছেন ‘দেবশ্রী রায়’ (Debashree Roy), তাঁর প্রাণবন্ত উপস্থিতি সকলকে মুগ্ধ করত। তিনিই দীর্ঘ সময় দূরে ছিলেন পর্দা থেকে। ধীরে ধীরে আবার ফিরছেন চেনা জগতে। এবার দুর্গাপুজো (Durga Puja) নিয়ে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার কথা বলেন তিনি। একসময় এই উৎসব মানেই ছিল আনন্দ, সাজগোজ আর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো। কিন্তু ২০২২ সাল থেকে তাঁর কাছে পুজো যেন আতঙ্কে ভরা! কিন্তু কী এমন হলো অভিনেত্রীর সঙ্গে?
সেই বছরেই মাকে হারানোর পর একে একে দিদিদেরও হারাতে হয় তাঁকে। এখন ঢাকের আওয়াজ শুনলেই বুকের ভেতর অজানা কাঁপুনি জেগে ওঠে। মনে হয়, আবারও বুঝি কাউকে হারাতে হবে। তাই গত কয়েক বছর থেকে তিনি ইচ্ছে করেই কলকাতা ছেড়ে চলে যান, এমন জায়গায় যেখানে কেউ তাঁকে চিনতে না পারে। কারণ শৈশবের স্মৃতিরা ভিড় করে চেনা শহরে। যেমন– শারদীয়ায় নতুন জামাকাপড় কেনা, ভাইবোনদের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা, আর মায়ের হাতের রান্না।
মায়ের হাতের মাংসের স্ট্যুর স্বাদ এখনও যেন জিভে লেগে আছে তাঁর। কিন্তু মা আর নেই। সেই স্বাদ আর ফিরে পাওয়া যায় না। দেবশ্রী নিজে বহুবার চেষ্টা করেছেন মায়ের রাঁধা পদগুলো বানাতে, কিন্তু কখনও সেই স্বাদ আনতে পারেননি। মায়ের অনুপস্থিতিতে জামাকাপড় কেনার আগ্রহও হারিয়ে গিয়েছে। নিজের জন্য কিছু কেনার ইচ্ছেটাই আর হয় না তাঁর ভেতর থেকে। তবে শুধু শোক নয়, এবার দুর্গাপুজোতে কিছু ভালো মুহূর্ত এসেছে তাঁর জীবনে।
এই বছর ফ্যাশন ডিজাইনার অয়ন হোড়ের আহ্বানে বহু বছর পর দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে একটি ফটোশুটের অংশ নেন দেবশ্রী। সম্প্রতি, লাল বেনারসি পরে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। অভিনেত্রীর মতে, লাল রঙ তাঁর প্রিয়, তাঁকে মানায়ও বেশ। সেই দিন রাত দেড়টায় মেকআপে বসে গঙ্গার ঘাটে ভোরের আলোয় শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা যেন বহুদিন পর নতুন করে ছুঁয়ে গিয়েছিল তাঁকে। শুটিং শেষে দলবল নিয়ে উত্তর কলকাতার বিখ্যাত কচুরি-জিলিপি খাওয়ার আনন্দও যেন এক অন্য রকম স্বস্তি এনে দিয়েছিল।
আরও পড়ুনঃ “একটা চরিত্র টানা দু’বছর করার মানে তার সঙ্গে মিশে যাওয়া”-গীতা এলএলবি’র শেষ শুটে আবেগঘন ‘প্রলয়জিৎ’ ওরফে ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়ের বিদায় বার্তা! শেষ হচ্ছে গীতার পথচলা!
অনেক বছর পরে এভাবে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া, হাসাহাসি, আড্ডা— তাঁর অস্থির মনকে খানিকটা শান্তি দিয়েছিল। দেবশ্রী নিজেও স্বীকার করেছেন, কাজের এই মুহূর্তগুলো তাঁকে কিছুটা হলেও শোক ভুলতে সাহায্য করেছে। তবুও দুর্গাপুজো তাঁর কাছে আর আগের মতো আনন্দময় নয়। তাই এবারও কলকাতায় থাকবেন না তিনি। তবে, প্রার্থনা করবেন যেন দেবী তাঁকে শক্তি দেন জীবনের দুঃখগুলো সামলানোর।