সমাজের চোখে “পারফেক্ট” সৌন্দর্য মানেই নির্দিষ্ট এক রঙ, নির্দিষ্ট এক আকৃতি—যেটা আমাদের ছোটোবেলা থেকেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এই ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে অনেকেই আজ সামনে আসছেন নিজেদের মতো করে। কেউ গায়ের রঙের জন্য, কেউ শরীরের গঠনের জন্য, তো কেউ নিজের উচ্চারণ বা উচ্চতা নিয়ে ঠাট্টার শিকার হয়েছেন বারবার। তবু কেউ কেউ তাঁদের আত্মবিশ্বাস আর ভালবাসায় এই সমস্ত বাঁধা পেরিয়ে চলেন দৃপ্তপদে। সাধারণ মানুষের এই লড়াই আরও দৃশ্যমান হয় যখন পরিচিত মুখেরা সেই কথা বলেন নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে।
শ্রুতি দাস—একটা নাম, যে আজ বাংলা বিনোদন জগতে পরিচিত মুখ। কিন্তু জনপ্রিয়তা আসার আগে তাঁকেও শুনতে হয়েছে অনেক কিছু। শুধুমাত্র গায়ের রঙের জন্য আজও তাঁকে কটাক্ষ করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে এই সবকিছুর মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকেছেন তিনি নিজের শক্তিতে, আর তার সবচেয়ে বড় উৎস ছিলেন তাঁর মা।
‘ত্রিনয়নী’, ‘দেসের মাটি’, ‘রাঙা বউ’—এই সমস্ত ধারাবাহিকে অভিনয় করে টেলিভিশনের পর্দা মাতিয়েছেন শ্রুতি। তারপর ধীরে ধীরে তিনি কাজ করেছেন বড় পর্দায় এবং ওয়েব সিরিজেও। কিন্তু জনপ্রিয়তা যত বেড়েছে, ট্রোলিং-ও তত বেড়েছে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর গায়ের রঙ নিয়ে বহু বার তাঁকে আক্রমণ করা হয়েছে। অনেকেই চেষ্টা করেছেন তাঁর আত্মবিশ্বাস ভাঙার। কিন্তু শ্রুতি কখনো হাল ছাড়েননি। কারণ, তাঁর সবচেয়ে বড় শক্তি তাঁর মা, যিনি ছোটবেলা থেকেই তাঁকে শেখাতেন—‘‘তুই সব এংগেল থেকে সুন্দর।’’
সম্প্রতি নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি হাসিখুশি ছবি শেয়ার করে শ্রুতি শেয়ার করেছেন মায়ের সঙ্গে তাঁর আত্মিক বন্ধনের কথা। সেই পোস্টে শ্রুতি লিখেছিলেন, ছোটবেলায় দাঁতের গঠন নিয়ে কটূক্তি শুনলেও মা বলতেন, ‘‘ঠোঁট চেপে হাসবিনা, মুখ খুলে, প্রাণ খুলে হাসবি দাঁত বের করে।’’ মা কখনোই তাঁকে বুঝতে দেননি যে তিনি কোথাও থেকে কম। বরং শিখিয়েছেন, ‘‘চাঁদের গায়েও কলঙ্ক থাকে।’’ সেই মা আজও রাতে জানলার পাশে বসে শ্রুতির ঘুমন্ত মুখ দেখেন আর চুপিচুপি আদর করেন—যা শ্রুতি বহুদিন পরে জেনেছেন। ছোটবেলায় যেমন দিদি-বোনের মতো ঝগড়া-মান-অভিমান চললেও, মায়ের এই নিঃশব্দ ভালোবাসা আজও তাঁর আত্মবিশ্বাসের বড় উৎস।
আরও পড়ুনঃ একদা ছিলেন প্রেমিক-প্রেমিকা! ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর হাসপাতালে পবনদীপ, কোথায় প্রিয় বন্ধু অরুণিতা? গায়িকর নীরবতায় ফুঁসছে নেটদুনিয়া!
এই পোস্টটি প্রকাশ্যে আসতেই বহু নেটিজেন শ্রুতির সাহস আর মমতার গল্পে মুগ্ধ হয়ে পড়েছেন। কেউ লিখেছেন, ‘‘মায়ের মতো সাপোর্ট সিস্টেম থাকলে জীবন সত্যিই বদলে যায়।’’ কেউ আবার বলেছেন, ‘‘তোমার কথাগুলো চোখে জল এনে দিল।’’ সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। একদিকে যেখানে গায়ের রঙ নিয়ে এখনও বিদ্রূপ চলে, সেখানে শ্রুতির মতো অভিনেত্রী নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, সৌন্দর্যের আসল মানে আত্মবিশ্বাস আর মায়ের ভালোবাসা। আর মা যখন বলেন ‘‘তুই সব এংগেল থেকে সুন্দর’’, তখন সে কথার ওজন যে কতটা গভীর, তা আজ বুঝতে পারছেন হাজারো মেয়ে।