“আত্মসম্মান বোধ থাকলে চলবে না…যাঁর যত বেশি, তার তত কাজ কম”, “তুমি যদি কম কথা বলো তো কাজ দেবে না কেউ” অকপট মনোময় ভট্টাচার্য! সঙ্গীতশিল্পীর কথায় উঠে এল ইন্ডাস্ট্রির কাজের সংস্কৃতির সত্য উপলব্ধি!

বাঙালির সঙ্গীতজগতে যাঁরা নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকটা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা জানেন নচিকেতা থেকে কবীর সুমন আর অঞ্জন দত্তের ভিন্ন স্বাদের গান তখন শ্রোতামহলে দাপট দেখাচ্ছিল। ঠিক সেই সময়েই শান্ত, স্থির কণ্ঠের এক তরুণ শিল্পী নীরবে নিজের জায়গা করে নিতে শুরু করেন। তিনি ‘মনোময় ভট্টাচার্য’ (Manomay Bhattacharya)। নজরুলগীতি থেকে রবীন্দ্রসঙ্গীত, যেখানে যত্ন দরকার মনোময় সেখানে নিজের স্বকীয়তা রেখে গেছেন। আবার আধুনিক গান বা ভক্তিগীতিতেও তার আলাদা পরিচয় তৈরি হয়েছে। বলা যায়, বাংলা সঙ্গীতের নানা ধারার ভেতর দিয়ে হেঁটে যাওয়া একজন শিল্পীর জীবনযাত্রার সাক্ষী তিনি নিজেই।

তবে, শুরুটা অবশ্য সহজ ছিল না। প্রথম অ্যালবাম বেরোয় ১৯৯৬ সালে আর তারপর প্রায় পাঁচটা বছর ধারাবাহিকভাবে নতুন কাজ এলেও তা শ্রোতাদের কাছে পৌঁছানো নিয়মিত ঘটত না, তবু হাল ছাড়েননি। এক সময় ক্যাসেট থেকে সিডিতে রূপান্তর আর সেই পরিবর্তনের মধ্যেই আবার সেই সিডি মাধ্যমই হারিয়ে গেল। বর্তমানে ইউটিউব আর স্পটিফাইয়ের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম উঠে এলো। মনোময় খুব কাছ থেকে দেখেছেন প্রযুক্তি বদলের সঙ্গে শিল্পীর পথচলার টালমাটাল দুনিয়া।

কিন্তু সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি যেটা বলেছেন, তা অনেকের কাছেই ভাবনার বিষয়। শিল্পীর কাজ, তার ইমেজ আর সম্পর্ক যে শুধু গানের গলা দিয়ে তৈরি হয় না, সেটা তিনি খোলাখুলিভাবে মেনে নিচ্ছেন। তাঁর নিজের ভাষায়,”শিল্পী হওয়ার প্রথম শর্ত হচ্ছে আত্মসম্মান বোধ থাকলে চলবে না। যাঁর যত বেশি আত্মসম্মান, তার তত কাজ কম আর যার একদম নেই সে রোজ কাজ পাচ্ছে। তুমি যদি কম কথা বলো তো কাজ দেবে না কেউ আর যদি বেশি কথা বলো তাহলে যেচে কাজ আসবে।”

তাঁর এই বক্তব্যেই স্পষ্ট যে শিল্পীজীবনের বাস্তবতা নিয়ে কোনও বাড়তি আবেগ নয়, বরং অভিজ্ঞতা নির্ভর সোজাসাপ্টা উপলব্ধি। তিনি আরও স্বীকার করেছেন যে জনসংযোগ, যাকে আজ সবাই ‘পাবলিক রিলেশন’ বলে, এখানেই তাঁর ঘাটতি ছিল শুরু থেকেই। অনেকেই যেখানে নিজের পরিচিত পরিসর বাড়াতে সচেষ্ট, মনোময় সেই পথে হাঁটতে চাননি। তিনি বলেন, “এইসবের জন্য যেটা খুবই প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে জনসংযোগ বা পাবলিক রিলেশন। আমার ক্ষেত্রে এটা প্রথম থেকেই ভালো না আর আমি সেভাবে চেষ্টাও করিনি।

আরও পড়ুনঃ নিজেকে মে’রে ফেলতে চেয়েছিলেন, ফিরে এসেছেন শুধুমাত্র ঈশ্বরে বিশ্বাসের জোরে! পরিবার ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই, সবকিছু জয় করে ক্যামেরার সামনে নিজের জায়গা দখল করা নিশান্তিকার দীর্ঘ সংগ্রাম আজ সাফল্যের গল্প!

কেরিয়ারের শুরুতে বুঝতাম না, যে শুভ বিজয়া জানানোটাও জনসংযোগের মধ্যে পড়ে। প্রচুর চেনা পরিচিত মানুষ, ইন্ডাস্ট্রির বন্ধুকেই শুভ বিজয়া জানাতাম, অনেকেই কাজ চাইছি ভেবে উত্তর দিতে না।” আজকের দিনে মনোময়কে দেখা যায় রিয়েলিটি শোয়ের বিচারকের আসনে, কিংবা গাইছেন সুচিন্তিত কয়েকটি গান, তবে হাতে গোনা হলেও মানসম্মত। স্রোতের সঙ্গে না ভেসে নিজের মতো পথ তৈরি করা তাঁর অভ্যাস। তাই দীর্ঘ দুই দশক ধরে সঙ্গীতজগতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের পরও তিনি এখনও নিজের জায়গা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন।