টলিপাড়ার জনপ্রিয় অভিনেত্রী ‘সোহিনী সরকার’ (Sohini Sarkar) বরাবরই সমাজ এবং বাস্তবতার প্রশ্নে নিজের মত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করেন। গত বছর রাজ্যের আরজি কর হাসপাতালে (R G Kar Medical College) চিকিৎসক ধ’র্ষণ ও হ’ত্যার ঘটনার প্রতিবাদে যখন গোটা বাংলা পথে নেমেছিল, তখন সোহিনীও প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর হয়েছিলেন। তবে তাঁর একটি মন্তব্য— “বাংলায় সন্তান জন্ম দিতে ভয় হয়”, সামাজিক মাধ্যমে প্রবল আলোড়ন তুলেছিল। কেউ তাঁর সাহসিকতার প্রশংসা করেছিলেন, আবার কেউ তীব্র কটাক্ষ করেছিলেন।
বিশেষ করে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) প্রতিক্রিয়া বিতর্ককে আরও উস্কে দেয়। কিন্তু এতদিন চুপ থাকলেও, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সোহিনী সেই মন্তব্যের আসল প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। অভিনেত্রীর দাবি ছিল, তাঁর বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল। সংবাদ মাধ্যম কেবল মাঝের একটি লাইন ছড়িয়ে দিয়েছে, অথচ পুরো কথাটির অর্থ ছিল অনেক বিস্তৃত। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, আজকের সমাজে সন্তান জন্ম দেওয়া বা মাতৃত্বের সিদ্ধান্ত কেবল আবেগের বিষয় নয়।
এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাস্তব পরিস্থিতি, দায়িত্ব আর ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা। তাঁর মতে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশেই বর্তমানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কাঠামোর অবস্থার কারণে একধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। একজন নারী বা পুরুষ যখন পরবর্তী প্রজন্মের কথা ভাবেন, তখন সেই বাস্তবতাকে এড়ানো যায় না। সোহিনী বলেন, সরকারি স্কুলের দুরবস্থা, বেসরকারি শিক্ষার বিপুল খরচ, আর চিকিৎসা পরিষেবার দুর্বলতা— সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করেছে।
শুধু মা হওয়ার ইচ্ছা থাকলেই হবে না, সন্তানের সঠিক যত্ন, শিক্ষা, নিরাপত্তা— এসব নিয়েও চিন্তা করতে হবে। কিন্তু এরপরেও বিতর্ক থামেনি। আবার মুখ খুলেছিলেন শাসক দলের মুখপাত্র, সোহিনীর দিকে কটাক্ষ দিয়ে এসেছে এবারও। এমনকি তাঁর গায়ে রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই নিয়ে সম্প্রতি আবারও সোহিনী স্পষ্ট করে জানিয়ে দিলেন নিজের অবস্থান। একটি সাক্ষাৎকারে সোহিনী বললেন, “দল বলতে আমি শুধু থিয়েটারের দল চিনি। ওটাই আমার কাছে ধ্যান-জ্ঞান, এর বাইরে কোনও দলের আশেপাশেও আমি নেই।
ছোটবেলা থেকে কোনও ইউনিয়ন, মিটিং-মিছিল বা আন্দোলনে অংশ নেয়নি। আরজি করের কান্ডের সময় আমি, আমার মহিলা শরীর দিয়ে সেটা অনুভব করেছিলাম। আমার স্ত’ন, যো’নি দিয়ে সেটা অনুভব করেছিলাম বলেই অংশ নিয়েছিলাম প্রতিবাদে। আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি, যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশ লোক কোনও দল করে না। হয়তো সবার ভোটার কার্ড আছে, কিন্তু সক্রিয় রাজনীতিতে কেউ নেই। আমার বাড়ির পরীক্ষার থেকে শুরু করে পাশের বাড়ির প্রতিবেশী সবাই কি দল করে? এরপরেও অনেকে বলেছেন যে, অন্য আন্দোলনে কেন তাহলে গেলাম না!
আরও পড়ুনঃ ‘কৃষভির মধ্যে আমি আমার মাকে ফিরে পেয়েছি!’ — মেয়ের জন্মদিনে আবেগপ্রবণ কাঞ্চন মল্লিক
আমি একজন পেশাদার অভিনেত্রী, চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলাই আমার কাজ। আর এই কাজ দিয়েই আমার পেট চলে, বাবা ছাড়াও তিনটে পরিবারের দায়িত্ব আমার কাঁধে। সব আন্দোলনে অংশ নেওয়া তো সম্ভব না, ওই ঘটনা আমাদের সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছিল বলে, সবাই রাস্তায় নেমেছিলাম।” তিনি বিশ্বাস করেন, প্রশ্ন তোলা মানেই বিরোধিতা নয় বরং সেটি পরিবর্তনের পথে একটি পদক্ষেপ। তাই তাঁর সেই বিতর্কিত মন্তব্যকে তিনি দেখেন এক ধরনের সামাজিক সচেতনতার প্রকাশ হিসেবে। নিঃসন্দেহে আমাদের সবাইকে ভাবতে বাধ্য করেছে, আসলে আমরা কেমন সমাজে আমাদের সন্তানদের বড় করতে চাই।






‘যা পরিস্থিতি মধুবনীকেও বলতে ভয় লাগছে ইউ লুক গুড ইন শাড়ি! ঋজুর বোকামির দায় যেন আমারও!’ সহ অভিনেতা রাজা গোস্বামীর মন্তব্যে বিত’র্ক টলিপাড়ায়